ওয়ার্ড প্রসেসিং-১

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড হচ্ছে উইন্ডোজের একটি সবচেয়ে শক্তিশালী এবং উপযোগি ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার। মাইক্রোসফট অফিস নামক সফটওয়্যারটি কম্পিউটারে ইনষ্টল করা থাকলে এটা পাওয়া যাবে। ওয়ার্ড প্রসেসিং কাজের জন্য আরও একটি সফটওয়্যার খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো বিজয় সফটওয়্যার। যার মাধ্যমে আমরা কীবোর্ড লে-আউট পাই। যাহোক, এ সম্পর্কে পরে ধাপে ধাপে বিস্তারিত জানা যাবে। আমরা এখন উইন্ডোজের মাইক্রোসফট ওয়ার্ড নামক এপ্লিকেশন সফটওয়্যারে কাজ করবো।বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড প্রসেসিয় সফটওয়্যারের মধ্যে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড লেখা লেখির কাজে বেশী ব্যহৃত হয়। কারণ মাইক্রোসফট ওয়ার্ডই ওয়ার্ড প্রসেসিং এর কাজ অত্যন্ত সহজে ও দ্রুত গতিতে করা যায়। এই সফটওয়্যারের সাহায্যে বিভিন্ন টেক্সট টাইপ করা, সেই টেক্সট সাজানো, ডিজাইন করা, টেক্সটের সাথে ছবি সংযোজন করা, টেক্সটের মধ্যে গ্রাফ তৈরি করা ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক ধরণের কাজ করা যায়। আমরা ধাপে ধাপে সেগুলি জানবো।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড খোলা:

উইন্ডেজের ডেক্সটপের উপরের ডান কোণে মাইক্রোসফট অফিস টুলবারের শর্টকাট থাকে। এখানে ডব্লিউ চিহ্নিত বক্সের উপর মাউস ক্লিক করলে লেখার জন্য একটি সাদা পাতা ওপেন হবে।অফিস শর্টকাট না থাকলেও ক্ষতি নেই। এজন্য ধাপে ধাপে যে কাজটি করতে হবে-

ডেক্সটপের নীচে > টাস্কবার > ষ্টার্ট মেনু > প্রোগ্রাম > ডব্লিউ চিহ্নিত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড।

উইন্ডেজের ডেক্সটপের নীচে ‘টাস্ক’ বারের ‘ষ্টার্ট’ মেনুর অন্তর্গত ‘প্রোগ্রামস’ মেনু কমান্ডটি সিলেক্ট করে প্রদর্শিত তালিকার বিভিন্ন নাম থেকে ‘ডব্লিউ’ চিহ্নিত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড লেখা মেনুটি ডবল ক্লিক করে ওপেন করতে হবে। এখন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের সাদা পাতা লেখা লেখির জন্য প্রস্তুত। লেখার কাজ শুরু করার আগে লেখা লেখির কাজে প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয়ের সাথে আমরা পরিচিত হব।

টাইটেল বার: আমাদের খোলা পাতার উপরে গাঢ় রঙের লম্বা সারির মধ্যে ডব্লিউ চিহ্নিত ‘মাউক্রোসফট ওয়ার্ড-ডকুমেন্ট ১’ লেখা সারিটির নাম টাইটেল বার। এখানে আমাদের তৈরী সেভ করা ফাইলের নাম দেখায় তাই এর নাম টাইটেল বার।

মেনু বার: টাইটেল বারের নীচে ফাইল, এডিট, ভিউ, লেখা ইত্যাদি শব্দ গুলিকে বলা হয় মেনু এবং এই লেখা গুলি যে সারিতে সারিবদ্ধ আছে- সেই লাইনকে বলা হয় মেনুবার। এই মেনুবারের প্রত্যেকটি মেনুর অধীনে রয়েছে অনেক গুলি সাবমেনু।পরবর্তীতে এই সাবমেনু নিয়ে বিষদ ভাবে আলোচনা করা হবে।

ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবার: মেনু বারের নীচে বিভিন্ন ছবি সম্বলিত বা বেশ কিছু চিহ্ন সম্বলিত একটি সারি রয়েছে এর নাম ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবার।

ফরম্যাটিং টুলবার: ষ্ট্যান্ডার্ড টুল বারের নীচে বিভিন্ন বক্স সম্বলিত বারটিকে ফরম্যাটিং টুলবার বলে। ফরম্যাটিং টুলবারের বাম দিকে রয়েছে ষ্টাইল বক্স। এই বক্সের সাহায্যে আমাদের তৈরি করা তথ্য গুলিকে বিভিন্ন ষ্টাইলে সাজিয়ে নিতে পারি।

ফন্ট বক্স: ফরম্যাটিং টুলবারের ফন্ট বক্সের মধ্যে অসংখ্য বিভিন্ন ধরণের ফন্ট রয়েছে। ফন্ট হচ্ছে টাইপ করার জন্য অক্ষর।প্রত্যেকটি অক্ষরের আবার ভিন্ন ভিন্ন নামও আছে। বক্সের ডান পাশে তীর চিহ্নে (মাউসের বাম পাশের বাটন চাপ দিতে হবে) ক্লিক করলে একটি ফন্টের তালিকা দেখা যায়। এখান থেকে পছন্দ মতো ফন্ট নির্বাচন করে নিতে হয়।

সাইজ বক্স: ফন্ট বক্সের পরের ছোট বক্সটি হলো সাইজ বক্স। এই বক্সের সাহায্যে অক্ষরের আকার পরিবর্তন করা অর্থাৎ ছোট বড় করা যায়। বক্সের ডান পাশে তীর চিহ্নে (মাউসের বাম পাশের বাটন চাপ দিতে হবে) ক্লিক করলে একটি সাইজ নম্বর তালিকা দেখা যাবে। এখান থেকে পছন্দ মতো ফন্ট সাইজ নির্বাচন করে নিতে হয়। এছাড়া উক্ত বক্সের মধ্যে কীবোর্ড দিয়ে প্রয়োজনীয় সাইজের সংখ্যা টাইপ করেও কাজটি করা যাবে।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে কাজ করতে হলে বিভিন্ন ধরণের টুলবারের সাহায্য নিতে হতে পারে। সেই টুলবারগুলো প্রয়োজন মনে করলে খোলা উইন্ডোতে নিয়ে আসা যায়। আবার বন্ধ করেও রাখা যায়। তবে সাধারণ ও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবার এবং ফরম্যাটিং টুলবার বেশী প্রয়োজন হয়। কারণ নতুন ফাইল তৈরী করা, সেভ করা, পুরাতন ফাইল খোলা, প্রিন্ট করা, ফন্টের নাম বদলানো, সাইজ বদলানো, বোল্ট, ইটালিক ইত্যাদি ধরণের স্টাইল বদলানোর নানা কাজ এই দু’টো টুলবার দিয়ে সম্পন্ন করা যায়। অন্যান্য টুলবার পর্দায় আনতে হলে মাউস পয়েন্টার দিয়ে টুলবারের যে কোন অংশে নিয়ে ডান দিকের বোতাম একবার চাপতে হবে। এখানে টুলবারের একটা তালিকা দেখাবে,তালিকার সবগুলো মেনুই এক একটা টুলবার। এখান থেকে পছন্দের টুলবারটি নির্বাচন করে নিতে হবে।আর এটা নির্বাচন করলে টুলবারের নামের পশে একটি টিক চিহ্ন ফুটে উঠবে।যে টুলবারগুলোর টিক আছে ঠিক সেই টুলবারগুলো উইন্ডোতে ওপেন আছে।এছাড়াও লেখার ডিজাইন করার জন্য এই মেনুর অধীনে আরও কয়েকটি বক্স রয়েছে যা পরবর্তীতে প্রয়োজন মত আলোচনা করা যাবে।

রুলারঃ এমএস ওয়ার্ড উইন্ডোর বাম পাশে এবং উপরের পাশে স্কেল চিহ্ন সম্বলিত যে দাগটি দেখা যায় তাকেই স্কেল বা রুলার বলে।রুলারের সাহায্যে ডকুমেন্টের আকার কতটুকু তা বোঝা যায়।

স্ক্রলবারঃ খোলা উইন্ডোর ডান পাশে লম্বা লাইন যার উপরে এবং নিচে এবং নিচে লম্বা লাইন যার ডানে এবং বামে তীর চিহ্ন রয়েছে।এগুলোকে যথাক্রমে বলা হয় আপার এ্যারো-লোয়ার এ্যারো, লেফট এ্যারো-রাইট এ্যারো। এগুলোর সাহায্যে উপরে-নিচে, ডানে-বামে টেস্কটগুলো স্ক্রল করে দেখা যায়।

কারসরঃ খোলা উইন্ডোর সাদা অংশের উপরের দিকে, বামে যেখানে মাউস ক্লিক করে লেখা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে একটা লম্বালম্বি ছোট দাগ দেখা যায়। যেটা অনেকটা জ্বলা নেভা করতে থাকে। অর্থাৎ কখনো স্পষ্ট আবার কখনো অস্পষ্ট হয়ে দেখা যায় এটাকেই করাসর বলে। লেখার কাজ শুরু করলে কারসরটি ডান দিকে সরতে থাকে।এভাবে লাইন শেষে আবার বামে ডানে লেখঅর সাথে সাথে চলাচল করে।উইন্ডোর যে অংশটুকুতে মাউসের কারসর ‘আই’ অক্ষরের মত দেখায় ঐ অংশটুকুকে ওয়ার্কিং স্পেস বলে।

ভিউঃ খোলা উইন্ডোর নিচে বামপাশে কয়েকটি স্থান বিশেষভাবে চিহ্নিত করে দেয়া আছে।যেমন নরম্যাল ভিউ, অনলাইন লেআউট, পেজ লেআউট, আউটলাইন লেআউট ইত্যাদি। এগুলোর সাহায্যে খোলা উইন্ডোকে বিভিন্ন ভাবে দেখা যায়। কাজ করার সুবিধার্থে এই নির্দেশ সম্বলিত চিহ্নগুলো প্রয়োজন হয়।

স্পেলিং: এই চিহ্নটি ডিকশনারীর। কম্পিউটারে একটি অত্যাধুনিক ডিকশনারী আছে। যখন ইংরেজী তথ্য বা ডকুমেন্ট টাইপ করা হয় তখন উক্ত তথ্যের বানান ভূল কিংবা গ্রামারের ভূল হচ্ছে কিনা দেখার জন্য এই ডিকশনারী আমাদের সাহায্য করে। কোন ইংরেজী শব্দের বানান ভূল হলে তার নিচে কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়। এই ডিকশনারীর সাহায্যে ঐ শব্দের বানান ঠিক করে নেয়া যায়।এই হলো মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর খোলা উইন্ডো। আমরা ইতিমধ্যে খোলা উইন্ডোর মধ্যকার কিছু চিহ্নের সাথে পরিচিত হয়েছি।পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

ফাইল তৈরী এবং সেভ বা সংরক্ষণঃ

এবার লেখা লেখির কাজের জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর খোলা উইন্ডোতে কিছু প্রাথমিক কাজ করে নিতে হবে। লেখা প্রাকটিস করার জন্য প্রথমে একটি ফাইল তৈরী করতে হবে এবং তা হার্ডডিস্কের নির্দিষ্ট কোন ফোল্ডারে সেভ করতে হবে। আর এজন্য যা করণীয়ঃ

(১) প্রথমে খোলা উইন্ডোর উপরে ‘ফন্ট’ বক্সের তীর চিহ্নের উপর ক্লিক করে ফন্টের নাম প্রদর্শিত তালিকা হতে ‘টাইমস নিউ রোমান’ নামের ফন্টটি সিলেক্ট করে নিতে হবে।

(২) এরপর পাশের ‘টেক্সট সাইজ’ বক্সের তীর চিহ্নের উপর ক্লিক করে ফন্টের সাইজ সম্বলিত বিভিন্ন নম্বর থেকে ২৬ নম্বর অথবা পছন্দ মতো সাইজ নম্বরে ক্লিক করে সিলেক্ট করতে হবে।

এবার নিজের নামটি এখানে টাইপ করতে হলে, এক এক করে অক্ষরগুলি অর্থাৎ নামের বানান করতে যে অক্ষর লাগে। প্রথমে বড় হাতের অক্ষর লেখার জন্য ‘শিফট’ কী চেপে ধরে টাইপ করতে হবে।পরবর্ত্তী অক্ষরগুলো সাধারণ ভাবে লিখে গেলেই সব ছোট হাতের অক্ষর হবে। নাম লিখতে যেয়ে কোন অক্ষর লেখা ভুল হলে যদি সাথে সাথে ভুলটি ধরা পড়ে, তবে সাথে সাথে কীবোর্ডের ‘ব্যাকস্পেস’ বাটনে এক চাপ দিলে মুছে যাবে আবার নতুন করে সঠিক অক্ষরটি লিখতে হবে।কোন শব্দ পুরোপুরি ভুল হলে তা সিলেক্ট করে ‘ডিলিট’ কী চাপলে মুছে যাবে। লেখার মধ্যে কোন বানান ভুল হলে যেখানে ভুল হয়েছে মাউসের পয়েন্টার তার ডান পাশে রেখে ‘ব্যাকস্পেস’ চাপলে মুছে যাবে এবং সাথে সাথে আবার টাইপ করে লেখা যাবে। এভাবে কোন বানান ভূল হলে তা সংশোধন করতে হবে।

(৩) এবার ফাইলটি সেভ করার জন্য কীবোর্ডের ‘সিটিআরএল’ কী চেপে ধরে ‘এস’ কী চাপতে হবে। এখানে একটি বক্স হাজির হবে। বক্সের উপরে সেভ ইন বক্সে ‘মাই ডকুমেন্ট’ নামক ফোল্ডারে আমাদের ফাইল সেভ হওয়ার ঈঙ্গিত দিচ্ছে। অবশ্য তাতে অসুবিধা নাই, ঐ ফোল্ডারেই ফাইলটি সেভ হোক। এরপর বক্সের নীচে ‘ফাইল নেম’ বক্সে যেখানে ‘ডকুমেন্ট ১’ লেখা আছে ওখানে নিজের নাম লিখে ডান পাশে ‘সেভ’ লেখার উপর ক্লিক করলে ফাইলটি সেভ হয়ে যাবে।এখন ফাইল নেম হিসেবে টাইটেল বারে নিজের নামটি দেখা যাবে।আবার ফাইল মেনু থেকে ‘সেভ’ অথবা ‘সেভ এজ’ সিলেক্ট করলেও পরবর্ত্তী সব কমান্ডগুলো একই রকম হবে এবং ‘সেভ’ বোতাম চেপে ফাইল সেভ করতে হবে।

ওয়ার্ড ফাইল বন্ধ করার নিয়ম:

এবার ফাইলটি বন্ধ করতে খোলা উইন্ডোর ফাইল মেনুর ভিতর ক্লোজ নামের মেনু সিলেক্ট করতে হবে। অথবা, কীবোর্ডের ‘সিটিআরএল’ কী চেপে ধরে ‘ডব্লিউ’ অক্ষর চাপতে হবে।

অথবা, টাইটেল বারের ডান দিকে লাল রঙের বক্সের ভিতর সাদা রঙের ক্রস চিহ্নের উপর মাউসের ক্লিক করলে ফাইলটি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে যতবার নতুন কিছু লেখা হবে ফাইল বন্ধ করার পূর্বে আবার সেভ করতে হবে।অন্যথায় নতুন কোন লেখা পরবর্ত্তীতে আর পাওয়া যাবে না।এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কীবোর্ডের ‘সিটিআরএল’ কী চেপে ধরে ‘এস’ অক্ষর চাপতে হবে।ব্যাস ফাইলটির লেখা সংযোজন করা  বা বিয়োজন করা সেভ হয়ে গেল।

সেভ করা ফাইল খোলার নিয়ম:

প্রথমে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের নতুন পাতা বা সাদা ওপেন করে নিতে হবে। এবার ফাইল মেনুর অধীনে ‘ওপেন’ মেনুতে ক্লিক করলে ওপেন টাইটেলের একটি ‘সংলাপ বক্স’ ওপেন হবে, সংলাপ বক্সের লুকইন নামের বক্সে ‘মাই ডকুমেন্ট’ ফোল্ডারটি নির্বাচিত করে তারপর প্রদর্শিত নামের তালিকা থেকে নিজের নাম লেখা ফাইলটি নির্বাচন করে ‘ওপেন’ বক্সে ক্লিক করলে অথবা মাউসের ডবল ক্লিক করলে সেভ করা ফাইলটি ওপেন হবে।

অথবা, কীবোর্ডের ‘সিটিআরএল’ কী চেপে ধরে ‘ও’ অক্ষর চাপতে হবে। এরপর ‘ওপেন’ টাইটেলের একটি ‘সংলাপ বক্স’ ওপেন হবে। সংলাপ বক্সের ‘লুকইন’ নামের বক্সে ‘মাই ডকুমেন্ট’ ফোল্ডারটি নির্বাচিত করে তারপর প্রদর্শিত নামের তালিকা থেকে নিজের নাম লেখা ফাইলটি নির্বাচন করে এন্টার কী চাপলে সেভ করা ফাইলটি ওপেন হবে।